Campa Cola Reliance : মুকেশ আম্বানির হাত ধরে ৫০ বছর পর ভারতের বাজারে ফিরছে ক্যাম্পা কোলা।

0
campa cola products

ক্যাম্পা কোলা (Campa Cola) এই নামটা হয়তো সত্তর দশকের মানুষের কাছেই বেশি পরিচিত। আপনার কাছে যদি নামটা অজানা হয়ে থাকে তাহলে বলে রাখি এটি সেই সময়ের এক নামী ভারতীয় ব্র্যান্ড/কোম্পানি যারা কোল্ড ড্রিঙ্কস বা পানীয় দ্রব্য বানাতো। কিন্তু বিদেশী কোম্পানির আগমনের ফলে ক্যাম্পা কোলার জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে সাথে একদম কমে যায়। বর্তমানে এই ব্র্যান্ডের কোল্ড ড্রিঙ্কস বাজারে নেই বললেই চলে। তবে ভারতের ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির উদ্যোগে পুনরায় এই ব্র্যান্ড ভারতের বাজারে চালু হতে চলেছে। আসুন জেনে নিই ক্যাম্পা কোলার পতনের কারণ ও পুনরায় ফিরে আসার কারণ সমন্ধে বিস্তারিত।

ক্যাম্পা কোলা বনাম কোকাকোলা :

শুরুতে ভারতের বাজারে ক্যাম্পা কোলার আগে বিদেশি কোম্পানি কোকা কোলার চল ছিল। কোকা কোলার পথ চলা শুরু হয় ১৮৮৬ সালে আমেরিকার আটলান্টা নামক জনপ্রিয় শহর থেকে। এই ব্র্যান্ডটি ভারতে আসে ১৯৫৬ সালে। শুরু থেকেই কোকা কোলার জনপ্রিয়তা শিখরে পৌঁছে যায়। অবশ্য সেই সময় এই কোম্পানিকে টক্কর দেওয়ার মতো তেমন কোনো কোম্পানি ভারতে ছিল না। তাই সেই সময় কোকা কোলা প্রচুর লাভ করে। কিন্তু ১৯৭৩ সালে ভারত সরকার একটি ‘বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন’ চালু আর এই আইনের বলা হয়,যে সব বিদেশি কোম্পানি ভারতে ব্যবসা করবে তাদের ৬০% শেয়ার ভারত সরকারকে দেওয়া বাধ্যতা মূলক এবং তাদের প্রোডাক্টের ও পণ্যের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য ভারত সরকার কে জানাতে হবে।

কোকাকোলা এই আইন অনুসারে সরকারকে শেয়ার দিলেও কোকা কোলা বানানোর সূত্র ও প্রোডাক্টের বিষয় যাবতীয় তথ্য সরকারের কাছে প্রকাশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ফলে সেই সময়ের ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই কোকা কোলাকে ভারত থেকে ব্যান করে দেন। কিন্তু সেই সময়ে কোকা কোলার বোতল তৈরি,মার্কেটিং, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি বিষয়ের দায়িত্ব সামাল দিতে পিওর ড্রিংকস নামক ভারতীয় কোম্পানি যার মালিক ছিলেন চিরঞ্জিত সিং। কোকা কোলা বন্ধ হয়ে যায় ফলে পিওর ড্রিংকসে কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পরে।

ঠিক এই সময়ে চিরঞ্জিত সিং কোকা কোলার ছেড়ে যাওয়া জনপ্রিয় তাকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয় ব্র্যান্ড ‘ক্যাম্পাকোলা’ চালু করেন। ক্যাম্পা কোলাকে মানুষ শুরু থেকেই পছন্দ করতে শুরু করে। এই ব্র্যান্ড দ্রুত সফলতা অর্জন করে তাদের মার্কেটিং পদ্ধতির জন্য। গোটা দেশে প্রায় ৫০টিরও বেশি ফ্যাক্টরি তৈরি করে তারা। এই ব্র্যান্ডের স্লোগান ছিল ‘দ্যা গ্রেট ইন্ডিয়ান টেস্ট’ যার মধ্যে একটা স্বদেশী ভাবছিল। এভাবে আস্তে আস্তে ক্যাম্পা কোলা ভারতে জনপ্রিয়তা শিখরে পৌঁছে যায় (Campa Cola Products)। কিছুদিন পরে কোম্পানি ক্যাম্পা কোলার আরো দুটি ফ্লেভার লঞ্চ করে। প্রায় ১৫ বছর ভারতীয় বাজারে এক নম্বর ব্র্যান্ড হিসাবে চালু ছিল ক্যাম্পা কোলা।

কিন্তু ভারতের বাজারে বেশিদিন জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি এই কোম্পানি। কারণ ১৯৫১ সালে ভারতের উদারনীতি চালু হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলিকে ভারতে বাজারে খোলা ব্যবসা করার অনুমতি দেয় সরকার। এর ফলে কোকা কোলা পুনরায় ভারতের বাজারে ফিরে আসে। শুধু তাই নয় কোকা কোলার মতো বিদেশি কোম্পানি পেপসিও (Pepsi) ভারতের বাজার দখল করে রেখেছিল আগেই। এই দুই বিদেশি কোম্পানির আগমনের ফলে অন্যান্য দেশীয় কোল্ডড্রিংকস কোম্পানি যেমন ক্যাম্পা কোলা,থামস আপইত্যাদির পতন শুরু হয়।

(Gold Buying Rules : সামনের মাস থেকে নতুন নিয়মে কিনতে হবে সোনা;নতুন নিয়ম আনল কেন্দ্র সরকার)

ক্যাম্পা কোলার আগমনে আম্বানির ভূমিকা :

প্রায় ৫০ বছর পরে রিলায়েন্স কোম্পানির মালিক মুকেশ আম্বানি হাত ধরে নতুন রূপে নতুন সাজে এই ব্র্যান্ড ভারতের বাজারে পুনরায় লঞ্চ হতে চলেছে। খবর অনুযায়ী ২২ কোটি টাকায় এই কোম্পানিকে নিজেদের নামে করেছে আম্বানি। ইতিমধ্যেই রিলায়েন্স ক্যাম্পা কোলার নতুন বোতলের ছবি,ব্র্যান্ডের লোগো সহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে তাদের ফেসবুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে।

একটি পুরোনো কোম্পানিকে নতুন ভাবে চালু করার পিছনে মুকেশ আম্বানি উদ্দেশ্য নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে একটা জিজ্ঞাসা চিন্হ থেকে যাচ্ছে। এই বিষয়ে অনেক মনে করছেন,জিও সিম লঞ্চের কৌশল কে কাজে লাগিয়ে এই ব্র্যান্ডকে মুকেশ আম্বানি ভারত সহ বিশ্বের বাজারে জায়গা করে নিয়ে চাইছে। কারণ ক্যাম্পা কোলার (Campa Cola Bottle) ৬০০এমএল ও ২ লিটারের বোতলের যথাক্রমে ১৫ এবং ৪৯ টাকা করা হয়েছে। সেই দিক দিয়ে দেখলে পেপসি ও কোকাকোলার ২ লিটারের বোতলের দাম ৯৫ টাকা। এই পরিসংখ্যান কে সামনে রেখেই ধারণা করা হচ্ছে যে কম দামে মাল বিক্রি করে পুরোনো ক্যাম্প কোলা কে প্রথমে সবার সামনে তুলে ধরতে চাইছে মুকেশ আম্বানি। যদিও পুরোনো দেশীয় কোম্পানির নতুন আগমনের ফলে সকলেই পজিটিভ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বাকি এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা সময় বলবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *